সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সি৯এইচ১৩এন ও৩

- এভরিথিং ইস ওকে, বাট আই আফ্রেড দেয়ার ইজ সামথিং মিসিং|
- মিসিং হোয়াট? ক্যান ইউ এক্সপ্লেন?
- ওয়েল, আই থিংক দা কভার ল্যাকস দা প্যাশন ইট ডিমান্ডেড – ইউ নো হোয়াট আই মিন|
- হুমম| আই আন্ডারস্ট্যান্ড|
- সো উইল ইউ প্লিজ রিভিউ দিস ওয়ান্স?
- ওকে, লেট মে ট্রাই|
- থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ – এন্ড সো সরি ফর বিয়িং সো চুজি|
- নো প্রবলেম এট অল|
- থ্যাঙ্কস| বাই|
- বাই – টক টু ইউ সুন :)

স্মাইলী দিয়ে চ্যাট শেষ করলেও অনিমেষের মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে ছিল| অনিমেষ একজন ফ্রিল্যান্স ইলাস্ট্রেটর| নানা অনলাইন আর্ট গ্যালারিতে তার কাজের নমুনা আছে, সেই দেখে সার্লা তার সাথে যোগাযোগ করে|
সার্লা উইলমর একজন লেখিকা, তার হরর লেখা নাকি খুব ভালো বিক্রি হয়| সার্লা’র বইয়ের টার্গেট গ্রুপ কিশোর-কিশোরীরা| তার নতুন সিরিজের জন্যে সে একজন ইলাস্ট্রেটর খুঁজছিলো – অনিমেষের কাজ তার ভালো লেগেছে| সার্লা’র অফারটা ডলার থেকে ভারতীয় টাকায় কনভার্ট করে যে অঙ্কটা দাড়িয়েছিলো সেটা দেখে তার চোখ কপালে উঠে গিয়েছিলো প্রায়! সার্লার লেখা সে পড়েনি, কিন্তু বইটার পিছনে যে পরিমান টাকা খরচ হবে সেটা থেকেই আন্দাজ করছিলো তার আয় কিরকম|

প্রথম বইয়ের ভিতরের ছবির কাজ ভালোয় ভালোয় মিটে গেলেও আটকে গেলো প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়ে| লে-আউট, স্কেচ, কালার-স্কিম সব এপ্রুভ হয়ে গেলেও ‘প্যাশন ফ্যাক্টরে’ এযাবত বার-চারেক রিভিশন হলো| অনিমেষ এতো বিরক্ত হয়ে পড়ছিল যে একবার মনে করে যে কাজটা ক্যানসেল করে দেয়! কিন্তু সমস্যা প্রফেশনাল এথিকস – যদি এরকম ভাবে একটা কাজ সে শুরুর আগেই ছেড়ে দেয় তাহলে সেটা তার বা ক্লায়েন্ট কারুর পক্ষেই ভালো হবে না| আর তাবাদে এডভান্স নেওয়া টাকাটার কথা ভেবেও প্রচুর মন খুঁতখুঁত করছে|
কাজেই অনিমেষ এখন প্রচুর ঝামেলায় আছে| সে ভেবে পাচ্ছে না যে তার দিক থেকে সমস্যাটা কি হচ্ছে| তার সাথে কাজ করতে করতে অনিমেষ বুঝেছে যে সার্লার দেখবার চোখ আছে – কাজেই তার কথার গুরুত্ব না দিয়ে অনিমেষ পারে না|
একটা পিছমোড়া করে বেঁধে পিটিয়ে আধমরা করা লোককে ঠেলেখুলে কবরখানার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে তার জন্যে কবর খুঁড়ে রাখা আছে – এটা ঠিকঠাক আঁকবার জন্যে যা কিছু করা দরকার সে তার সাধ্যমতো করেছে| এখানে ‘প্যাশন ফ্যাক্টর’টা সে কিভাবে আমদানি করবে সেটা অনিমেষ ঠিকঠাক বুঝতে পারছে না|
‘যাক কটাদিন, দেখেদেখে চোখ অভ্যস্ত হয়ে গেছে – এখন কিভাবে ছবিটা ইমপ্রুভ করবো বুঝতে পারবো না, কদিন পরে আবার ধরলে ঠিক নেমে যাবে|’
মনে মনে ভাবলো অনিমেষ – পরের রিভিশন জমা দিতে দু-চারদিন সময় পাওয়া যাবে, কাজেই তাড়াহুড়ো করে কিছু করার প্রয়োজন নেই| একটানা বসে থাকার দরুন ঘাড় যন্ত্রণা করছে – মাথার পিছনে দুহাত দিয়ে চেয়ারের উপরে শিরদাঁড়া টান করে বসে চোখ বুজলো অনিমেষ|
"আর ইউ দেয়ার?"
স্পিকারে ‘টুং’ শব্দ হয়ে উঠতেই মনিটরের দিকে চোখ গেলো অনিমেষের| সার্লার মেসেজ|
"এখন আবার কি চায় রে বাবা?" মনে মনে ভেবে বিরক্ত হয়ে উঠলো অনিমেষ| কিবোর্ডের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে একটু আটকে গেলো সে| নাঃ, এখন উত্তর দেবে না! রাত দুটো বাজতে চললো প্রায় - এবার শুয়ে পড়ার দরকার|

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো পিসির ডাকে| রাতে দেরি করে শুয়েছিলো অনিমেষ, সকালে উঠতেও তাই বেশ দেরি হয়ে গেছে| চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘড়ির কাঁটা প্রায় সাড়ে-নটা ছুইছুই|
"বাপরে – এতো বেলা হয়ে গেলো! ডাকনি কেন?"
"অকাতরে ঘুমুছিলি তাই আর ডাকিনি – কাল অনেক রাত অব্দি কাজ করছিলি নাকি?"
"হুম – মা অফিসে চলে গেছে?" পিসির হাত থেকে চায়ের কাপ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো সে|
"হ্যা বেরুনোর আগে তোকে ডেকে দিতে বললো|"

খাওয়ার ঘরে টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে, পিসি এতক্ষণে অনিমেষের জন্যে জলখাবারের জোগাড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে| তার মানে অনিমেষকেও এখন বাথরুমের দিকে যেতে হবে|
চায়ের শেষটুকু লম্বা চুমুক দিয়ে অনিমেষ ধীরে-সুস্থে বিছানা থেকে নেমে প্রথমেই কম্পিউটার অন করলো| বুট হতে থাকুক, অনিমেষ বাথরুমের দিকে এগুলো|
"বাথরুমে গেছিস? তাড়াতাড়ি কর, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে|" খাওয়ার ঘর থেকে পিসির ডাক ভেসে এলো|
যতক্ষণ ঘুমুছিলো ততক্ষণ ঠিক আছে, কিন্তু কাজে বসবার আগে অব্দি চাই-বা-না-চাই তাকে পিসির খবরদারি সহ্য করতেই হবে| দেখতে দেখতে অনিমেষের বয়স যে প্রায় পঁচিশ ছাড়িয়ে ছাব্বিশ হতে চললো, সেটা না মা না পিসি, কেউই বুঝতে চায় না!

চান করে, জলখাবার খেয়ে অনিমেষ এবার ভাবলো কি করা যায়? সার্লার কাজ আজকে করবে না, দুয়েকদিন ব্রেক নিয়ে তারপরে আবার ধরবে, নয়তো আবার সেই জায়গাতেই আটকে যাবে| ইন্টারনেট চালু করে মেল দেখতে বসলো সে| নতুন মেল সামান্যই – যা আছে বেশিরভাগ নিউজলেটার আর ফেসবুক, গুগল-প্লাসের নোটিফিকেশন| সার্লার একটা মেল আছে দেখলো, "মাস্ট সি!" উহু – এখন ওটা খুলবে না অনিমেষ| তা ছাড়া কাজের মেল নেই সেরকম| বেছে বেছে ফালতু মেলগুলো ডিলিট করলো অনিমেষ| তারপরে ভাবতে বসলো কি করা যেতে পারে এখন| ফ্রিল্যান্স এজেন্সিগুলো একটু ঘুরে দেখবে নাকি? যদি দুয়েকটা কাজের ধান্দা পাওয়া যায়? বুকমার্ক থেকে ক্লিক করতে গিয়ে একটু থমকালো অনিমেষ – না থাক এখন|
এরকম নানা জিনিষ নিয়ে দোনামনা করতে করতে অনিমেষ যখন প্রায় বিরক্ত হয়ে পড়ল তখন ফোনে ‘টুং’ করে নোটিফিকেশন – মেসেজ এসেছে|
ফোনটা দেখা হয়নি ঘুম থেকে ওঠা অব্দি| ফোন খুলে অনিমেষ দেখলো তন্ময় মেসেজ পাঠিয়েছে|
"ফাঁকা আছিস? আসবি?"
"কোথায়?"
"ননীদা’র দোকান"
"আসছি"
যাক এতক্ষণে একটা কাজের মতো কাজ পাওয়া গেলো| দশটা বাজে – মানে ঘন্টা-খানেক আড্ডা দেওয়া যেতে পারে| এবার অনিমেষ চাঙ্গা হলো|
অনিমেষ তন্ময়কে মেসেজ পাঠিয়ে দেখলো যে আরো দুটো আনরেড মেসেজ আছে, একটা তথাগতের, আর একটা সার্লার| তথাগতের মেসেজটা একটা জোক, অনেকবার পড়া, কাজেই হাসি পেলো না অনিমেষের| এবার সার্লারটা খুললো অনিমেষ|
"মেইলড ইউ, প্লিজ চেক|"
ঠিক আছে পরে দেখা যাবে| এখন আপাতত আড্ডা|
এবার মোবাইলের ঘড়িতে চোখ গেলো অনিমেষের – আজ শনিবার| তন্ময়ের মেসেজ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আরো বন্ধু-বান্ধব এসে হাজির হয়েছে ননীদার চায়ের দোকানে – কাজেই তড়িঘড়ি করে প্যান্ট আর টিশার্টটা পরে পিসিকে হাঁক দিলো তন্ময়|
"পিসি আমি একটু বেরুচ্ছি|"
"এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? হ্যা? কটা বাজে দেখেছিস? খাবি কখন?"
"ধুস এইমাত্তর তো একগাদা খেলাম! পরে …"
"তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা|"
"তুমি খেয়ে নিও|"
"হ্যা তাই করি আর কি! তোমরা মা-ব্যাটায় না খেয়ে থাকো, আর আমি …"
পিসির গজগজানি শুনতে শুনতেই ঝটপট সিড়ির নিচ থেকে সাইকেল বের করে ননীদার দোকানের দিকে রওনা দিলো অনিমেষ|

বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর দেড়টা বেজে গেলো| পিসির ঘড়ি অনুযায়ী অনেক দেরি| বাইরের গেট খোলার শব্দ হতেই দরজার কাছে পিসিকে দেখা গেলো|
"এখন বাড়ি ফেরার সময় হলো?"
কোনো উত্তর দিলো না অনিমেষ| সাইকেলটা ঝনাত করে সিঁড়ির নিচে একরকম ফেলে দিয়ে ঘরে ঢুকতে গেলো সে|
"কি শুরু করেছিস কি? সেই সকালে বেরিয়ে এখন এই ভরদুপুর অব্দি … কি পেয়েছিস – হ্যাঁ?"
"আ:" চাপা গর্জন করে উঠলো অনিমেষ|
"হ্যাঁ – সে তো| এই অবেলায় …"
"থামো!" এবার রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে উঠলো অনিমেষ|
অনিমেষ এমনি শান্ত ছেলে – তার এরকম ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে পিসি চমকে গেলো| অনিমেষ পিসির পাশ কাটিয়ে তার ঘরে ঢুকে গেলো| কিছু একটা হয়েছে – কিন্তু কি? পিসি কিছু বুঝতে পারলো না|
খাওয়ার ঘরে এসে পিসি বাথরুম থেকে জলের আওয়াজ পেলো| ঝরঝর শব্দে শাওয়ার থেকে জল পড়েই চলেছে| অনিমেষ চান করছে| একটু চিন্তা করে পিসি শান্ত গলায় জিজ্ঞাস করলো|
"খাবিতো অনি? খাওয়ার দেবো?"
"হুম|" বাথরুম থেকে অনিমেষের সংক্ষিপ্ত উত্তর ভেসে এলো|
যাক! ছেলে তাহলে শান্ত হয়েছে| পিসি ব্যস্ত হয়ে এবার রান্না ঘরের দিকে চললো|

অনিমেষ খেতে বসলে পিসি দেখলো যে তার হাত থরথর করে কাঁপছে!
"তুমি খাবে না পিসি?"
"নারে! ঐ অবেলায় তোর সাথে-জল খাবার খেলাম, খিদে নেই এখন| বৌদি আসুক, তারপরে একসাথে বসবো|"
অনিমেষ যেন কিরকম আনমনা, পিসির কথা তার কানে ঢুকলো কি ঢুকলোনা বোঝা গেলো না|
"ঝোল দিই আরেকটু?"
"হ্যাঁ?" কাঁপা হাতে ভাত মাখতে-মাখতে জিজ্ঞেস করলো অনিমেষ|
"ঝোল নিবি আর? দেবো?"
"নাঃ – থাক|"
"অনি …"
"হু?"
"কি হয়েছে রে?"
"কি?" একটু থতমত খেলো অনিমেষ|
"কোনো ঝামেলা ঝঞ্ঝাট হয়েছে? মানে তোর যেরকম মেজাজ দেখলাম …" একটু ভয়ে ভয়ে পিসি জিজ্ঞেস করলো|
উত্তর দেওয়ার আগে যেন একটু গুছিয়ে নিলো অনিমেষ|
"ঝামেলা বলতে – হ্যাঁ, আসলে …"

লোকটার বছর ত্রিশ-বত্রিশ মতো বয়স হবে| লোকাল নয়, তবে বাজার এলাকায় তাকে মাঝে মাঝে দেখা গেছে মনে হয়| চেহার বা পোশাক পরিচ্ছদ লোকটাকে সোজা রাস্তার মানুষ বলে মনে হয় না| তবে এই জমানায় বাইরে থেকে দেখে মানুষ বোঝা যায় না| কাজেই ননীদা’র দোকানের আড্ডা শেষ করে সবাই যে যার মতো বাড়ির দিকে চলতে শুরু করলে যখন লোকটার তার সাথে সাইকেলের পাশাপাশি বাইক নিয়ে আসতে শুরু করলো, তখন অনিমেষের মনে কোনো সন্দেহ জাগে নি|
মাসতুতো বোন পম্পি ফোন করেছিলো - সে এবছর হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছে, তারও আঁকা-আঁকির শখ আছে, কাজেই কোন আর্ট কলেজে কি নিয়ে পড়লে কি করা যেতে পারে, তাই নিয়ে অনিমেষ তাকে একগাদা উপদেশ দিচ্ছিলো|
এক ঝটকায় যখন তার কান ও হাতের মাঝখান থেকে ফোনটা উধাও হয়ে গেলো তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্যে অনিমেষ হতচকিত হয়ে পড়ল| তারপরেই দেখলো যে তীরের বেগে তার সামনে দিয়ে সেই লোকটা বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে আর তার বাঁ-হাতে দেখা যাচ্ছে অনিমেষের চোদ্দহাজার টাকার ফোন!
হুশ ফিরতেই অনিমেষ বুঝলো যে সে স্থান-কাল ভুলে চিত্কার করে খিস্তি করে চলেছে| দুপুরে রাস্তায় মানুষ সেরকম নেই, যারা আছে তারা অবাক হয়ে অনিমেষের দিকে তাকিয়ে আছে|
"মোবাইল! আমার মোবাইল!" কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো অনিমেষ|
রাস্তার গুটিকয়েক লোক এবার উদ্যমী হয়ে লোকটাকে ধরতে চাইলে ততক্ষণে সে তাদের নাগালের অনেক বাইরে চলে গেছে|
কিন্তু অনিমেষকে আরেকবার চমকে উঠতে হলো| যেখানে অনিমেষের ফোন ছিনতাই হয়েছে, তার সামনেই কিছুটা দুরে একটা তিন রাস্তার মোড় পড়ে| লোকটা লুকিং-গ্লাসে মুষ্টিমেয় জনতাকে দেখতে গিয়ে খেয়াল করেনি যে রাস্তার আরেকদিক থেকে একটা অটোরিক্সা আসছে|
লোকটা বাইক শুদ্ধু অটোয় ধাক্কা খেতেই অনিমেষ চিত্কার করতে করতে প্রানপনে সাইকেল চালিয়ে সেদিকে ছুটলো|
অটোয় দুজন যাত্রী ছিল আর অটোওয়ালা| অনিমেষকে ‘মোবাইল মোবাইল’ বলে চিত্কার করে তাদের দিকে আসতে দেখে তারা বুঝতে পারলো যে ঘটনাটা কি হয়েছে| আর এক্সিডেন্টএর পরে লোকটার একটা পা তার বাইকের নিচে চাপা পড়ে আছে| কাজেই তাকে ধরে ফেলাটা তেমন কঠিন কাজ হলো না|

সাইকেলটা কোনোরকমে দাঁড় করিয়ে অনিমেষ দেখলো যে তার ফোনটা রাস্তার উপরে পাশেই পড়ে আছে| তড়িঘড়ি সেটা তুলে দেখলো যে পিছনে কেবল কটা আঁচড় লাগা ছাড়া আর কোনো ক্ষতি হয় নি| আর তারপরেই তার নজর গেলো লোকটার দিকে| অটোওয়ালা আর দুজন যাত্রী ততক্ষণে মাটিতে পড়ে থাকা লোকটাকে বাইক সরিয়ে বের করে আনছে| ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এবার অনিমেষ তীরে মতো সেদিকে এগিয়ে এসে প্রথমেই সপাটে একটা চড় লাগলো লোকটার গালে|

"পুলিশ? পুলিশে খবর দিসনি?"
"রাখো তো পুলিশ! ১০০ নম্বরে ডায়াল করলাম – আগে তো কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নি! তো – দেখলাম ‘প্লিজ চেক দা নাম্বার’ বলছে| এরকম কোনো নম্বরই হয় না! বোঝো!"
"তারপর?"
"যাই হোক ততক্ষণে লোকজন জমে গেছে – তাদেরই কেউ হয়তো অন্য কোনো নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানালো|"
"ধরে নিয়ে গেলো?"
"হ্যা! আমাকেও যেতে হলো কমপ্লেন লেখানো’র জন্যে – থানা থেকে ঘুরে আসতেই এতো দেরি হয়ে গেলো|"
"ইশ – ভাগ্যিস তোর কোনো ক্ষতি-বিতি হয় নি| তা হ্যাঁরে ওসব চোর-পকেটমার, এরা তো সুবিধের লোক নয় – মারধর করলি, এদের গ্যাংএর লোক তোর আবার কোনো … কোনো বিপদ আপদ হবে না তো অনি?"
অনিমেষের খাওয়া অনেক্ষণ শেষ, মানসিক ভাবেও সে এখন অনেকটা স্থিতিশীল, কেবল সমস্যা বলতে স্নায়ুর চাপে তার হাত-পা কাঁপছিলো, সেটা এখনো পুরোপুরি কাটেনি আর হাতের তালু আর আঙ্গুলে যে চিনচিনে জ্বালাটা আছে তাতে মনে হচ্ছে ফোস্কা না পড়ে ছাড়বে না| বোতল থেকে অনেকটা জল খেলো সে|
"ধুস! দুশ্চিন্তা করো না তো! ফালতু ওসব নিয়ে ভেবো না| কিস্যু হবে না|"

লোকটির দলবল আছে কি না কে জানে – তারা অনিমেষের উপর প্রতিশোধ নিতে পারে কিনা, সেটা নিয়ে তার সামান্য দুশ্চিন্তা থাকলেও লোকটির থেকে যে তার কোনো ভয় নেই সেটা পিসিকে বলা গেলো না|
সজোরে গোটাদুয়েক চড় মারার পর অনিমেষের দুটো হাতই অবশ হয়ে গেলো| কিন্তু তার প্রতিশোধস্পৃহা কমেনি তখনো – আনচান করে এদিক ওদিক দেখতেই সে পাশেই লাইটপোস্টের গায়ে বাঁধা একটা পতাকা পেয়ে গেলো| কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা নিশ্চই| ভোটের আগে রাস্তার দুপাশ রংবেরঙ্গের দলীয় পতাকায় ছেয়ে থাকে, কিন্তু ভোট মিটে গেলেও তারা দিনের পর দিন সেইভাবেই ঝুলে থেকে আবহাওয়ায় জীর্ণ হয়ে দৃশ্যদুষনের কারণ ঘটায়| অনিমেষ জোরে এক টান দিতে পতাকাটা সহজেই পচে যাওয়া দড়ির বাঁধন খুলে তার হাতে চলে এলো|

"কিছু হয়ে গেলে কিন্তু মুশকিলে পড়ে যাবেন! ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি!"
দুজন কনস্টেবল আর জমে যাওয়া জনতা তাকে ছাড়াতে পারছিলো না কোনো ভাবেই| তার উপরে যেন দৈত্য ভর করেছিলো! থানায় গিয়ে যখন সে লোকটাকে আরেকবার দেখলো তখন সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে সে এ কাজ পারে| লোকটার ডানপাটা বাইকের তলায় চাপা পড়ে জখম ছিল| কিন্তু রক্তে ভেজা জামাপ্যান্টের বাইরে বাকি শরীরের যা দেখা যাচ্ছে, কালচে-নীলচে দাগড়া-দাগড়া কালশিটেয় ভর্তি| কপালের একপাশে, থুতনির নিচে আর দুহাতের তালুর উপরে মাংশ ফেটে লালচে সাদা হাড় বেরিয়ে আছে| প্রথমের গোটা দুয়েক চড়চাপাতি ছাড়া অটোওয়ালা, যাত্রী বা বাকি পথচারীদের হাত লোকটির উপরে পড়েছে বলে অনিমেষ মনে করতে পারছে না|

বালিশে মুখ লুকিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলো অনিমেষ – কিন্তু তার ঘুম আসছে না| মা আসেনি এখনো, পিসি বসার ঘরে বসে টিভি দেখছে| ঘুমোতে পারলে স্নায়ুর আরাম হত অনেকটা, কিন্তু সে চেষ্টা করা বৃথা এখন| বিছানায় উঠে বসে একটা লম্বা নিশ্বাস নিলো অনিমেষ| তারপরে তার কাজের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো| কাজের ভিতরে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পারলেই মাথার সব থেকে বেশি আরাম হবে|

- মাই গড! দিস ইস ইনক্রেডিবল!
- ?
- আই মিন – দিস ইস একজ্যাক্টলি হোয়াট আই হ্যাড ইন মাইন্ড|
- রিয়ালি? ডু ইউ লাইক দিস?
- ইউ আর এ স্টার অনিমেষ|
- থ্যাঙ্কস সার্লা!
- নো থ্যাঙ্ক ইউ অনিমেষ| দিস ইস ডান|

সার্লা’র বইয়ের কভার ফাইনালাইজ হয়ে গেলো তাহলে! আদপে সে নতুন কিছুই করেনি বলতে গেলে, শেষের আগের ছবিটা নিয়ে বসে তার উপরেই টাচআপ করেছে তার ব্যথা-জ্বলা হাত দিয়ে|
কি ম্যাজিক হয়ে গেলো?
ভাগ্য ভালো পকেটমার লোকটাকে ডান্ডাপেটা করতে গিয়ে তার হাতে যে জ্বলুনি হয়েছিল সেগুলো থেকে ফোস্কা পড়েনি এখনো অব্দি| সেই ভয়টাই সব থেকে বেশি পাচ্ছিলো অনিমেষ, ডানহাতে কোনরকমে যদি ব্যথা বা ফোস্কা হয়ে যায়, তবে গেলো আঁকিবুঁকি! সেই ভয় থেকে প্রথমেই সে সার্লা’র ছবিটা নিয়ে পড়েছিল যাতে কোনো দেরি না হয়ে যায়|

- আই উইল সেন্ড ইউ দি রেস্ট এমাউন্ট ফর দি বুক টুডে আফটারনুন|"
- থ্যাঙ্কস সার্লা|
- এন্ড আই ওয়াজ প্লানিং ফর দি নেক্সট স্টোরি ইন দিস সিরিজ| আই উইল সেন্ড ইউ ব্রিফস শর্টলি|
- থ্যাঙ্কস সার্লা|
- সি? আই নো ইউ আর দি রাইট পার্সন এন্ড ইউ নিডেড প্রপার ইন্সপিরেশন| আই হোপ দি আদার রেফারেন্স ওয়াজ হ্যান্ডি|
- আদার রেফারেন্স?
- ইয়েস! দি মেল আই সেন্ট ইউ ইয়েস্টারডে|
সেটাতো দেখাই হয়নি এখনো! সার্লা কাল সকালে তাকে মেল করেছিলো, তার পর মেসেজ পাঠিয়েছিলো – সেতো সে দেখেনি এখনো! কি আছে তাতে?
- ওহ ইয়েস – সিওর! আই চেকড দ্যাট|
ভাগ্যিস টেক্সটে মুখের ভাব বোঝা যায় না, নয়তো সার্লা বুঝতো যে সে একটা ডাহা মিথ্যে কথা বললো|

সব ভালো যার শেষ ভালো| সার্লা চলে গেলো, ঘন্টা চারেক পরে তার একাউন্টে আরেকটা জবরদস্ত অঙ্ক ঢুকবে, আর তার সাথে নতুন প্রজেক্ট! দুপুরে যেরকম বিদিগিশ্রি একটা মানসিক ভাব ছিল সেটা এখন কেটে গিয়ে একটা চমত্কার ফুরফুরে মেজাজ অনিমেষের| ঘড়ি দেখলো – সাড়ে তিনটে বাজতে চললো প্রায়| কিন্তু এখন ঘুম আসছে না, আর তার জন্যে সে বিরক্তও নয়|
ফেসবুকে গিয়ে লাভ নেই, বন্ধুরা কেউ অনলাইন নেই এখন | মেল দেখতে গিয়ে এবার মনে হলো সার্লা’র সেই অন্য মেলটার কথা – ‘মাস্ট সি!’ কি আছে তাতে? এখনো সেটা আনরেড হয়ে পরে আছে|
মেলটা খুলে দেখলো সেখানে একটা লিঙ্ক আছে, তার ডেভিয়ান্ট আর্ট গ্যালারির একটা ছবির লিঙ্ক ‘চাইল্ডহুড ওয়ার্ক #৮!’ ছেলেবেলার আঁকা কোনো ছবিকেই সার্লা তার অনুপ্রেরণার জন্যে পাঠালো| কি ছবি?

লিঙ্কটায় ক্লিক করতে অন্য ট্যাবে ছবির পাতাটা খুললো| ছবিটা দেখতেই একটা শীতল-শিহরণ খেলে গেলো তার শিরদাঁড়া বেয়ে|
প্যাস্টেলে আঁকা, তখন সে মনে হয় ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ত| সন্ধ্যের অন্ধকারে একটা পুরনো কুয়োর ভিতর থেকে দুটো হাত কুয়োর পাড় আঁকড়ে ধরে আছে, কেউ যেন কুয়োর ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে| না আছে ঠিকঠাক এনাটমি, না পারস্পেকটিভ! সেই সময়কার অপটু হাতের কাজ|
স্মৃতির জখম পুরো সেরে এসেছিলো| ‘সেই’ ঘটনাটার কথা অনিমেষ মন থেকে মুছেই ফেলেছিল একদম| কিন্তু সে জানতো না যে পম্পি তার ডেভিয়ান্ট আর্ট পোর্টফোলিও বানিয়ে দেওয়ার সময় পুরনো খাতা থেকে এই ছবিটাকেও একসাথে আপলোড করে রেখেছে| ‘চাইল্ডহুড ওয়ার্ক #৮’ তার অজান্তেই এখনো ‘সেই’ ঘটনার সাক্ষী হয়ে ইন্টারনেটে ডিজিটালি জাজ্বল্যমান!

"খবরদার আমার মাকে ঝি বলবি না|"
"একশো বার বলবো – কেন জানিস না?"
"না – বলবি না, বললে কিন্তু …"
"বললে কি করবি? মারবি? ঝিয়ের ছেলে চাকর!"
"অনি! এবার সত্যি সত্যি মারবো কিন্তু!" কান্না চাপতে চাপতে বললো ছেলেটা|
"মার! মেরে দেখা! মাকে বলে দেবো – তোকে আর তোর মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে!" একরোখা হয়ে গেলো অনিমেষ|

ধাক্কাধাক্কি করতে করতে কখন যে পুরনো কুয়োটার কাছাকাছি তারা চলে এসেছে সেটা বাচ্চাদুটির কেউই বুঝতে পারে নি|
একসময়ে অনিমেষ প্রবল আতঙ্কে দেখলো যে সে সবলে কুয়োর পাড় ধরে ঝুলে আছে আর অন্য ছেলেটি তাকে প্রানপনে টেনে তোলার চেষ্টা করছে| পায়ের নিচ থেকে কুয়োর একটা বেড় খসে পড়তেই তার প্রাণভয় আরো প্রবল হয়ে পড়ল| এক ঝটকায় সেই ছেলেটির জামা খামছে ধরতেই সে উঠে আসার অবলম্বন পেলো, কিন্তু তারপর …
‘মর ব্যাটা ঝিয়ের ছেলে চাকর! পড়ে থাক কুয়োর ভিতর!’
ভয় পেয়ে সেখান থেকে ছুটে পালিয়েছিলো অনিমেষ| ছুটতে ছুটতে সেই ছেলেটির কাতর আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিলো সে কুয়োর ভিতর থেকে| সেই আর্তনাদ তার কানে লেগেছিলো অনেকদিন| সেই ছেলেটিকে তারপর সে আর কোনদিন দেখেনি| তবে কদিন পরে সে চেষ্টা করেছিলো যদি ছবির মধ্যে দিয়ে আবার ছেলেটিকে ফিরিয়ে আনতে পারে|

"ঘুমোসনি এখনো?"
"উ?"
"ঘুমোসনি? এবার শুয়ে পড়, সকাল হতে চললো প্রায় – নে বাবা এবার শুয়ে পড় মানিক| ওঠ ওঠ|"
হুস হলো অনিমেষের, কম্পিউটারের উইকিপিডিয়া খোলা, নানা লিঙ্ক ঘুরে ফিরে সেখানে সে একমনে এড্রেনলিন হরমোন সম্পর্কে পড়ছিল| আকাশ ফর্সা হয়ে এসেছে| ঘড়ি না দেখেও বলা যায় এখন ভোর পাঁচটা বাজতে চললো প্রায়| পিসি এরকম সময়ে ওঠে রোজ| তার ঘরে আলো জ্বলতে দেখে তাকে দিয়ে কম্পিউটার বন্ধ করিয়ে, আলো নিভিয়ে, বিছানায় শুইয়েই তারপর পিসি নিজের কাজে চলে গেলো|

পিসিকে অনিমেষ বা তার মা তাদের বাড়ির কাজের মহিলা ভাবতেই পারে না| আর একমাত্র ছেলেটি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর থেকে ইনিও অনিমেষকে তার সমস্ত স্নেহ উজাড় করে দিয়েছেন| পিসি অনিমেষদের মা-ছেলের এই ছোট্ট পরিবারেরই একজন|

- প্রকাশিত : তীর্থ : দীপাবলী সংখ্যা ২০১৫

মন্তব্যসমূহ

  1. এক কথায় অনবদ্য। আমার লেখা একটা মজার গল্প পড়ে দেখতে পারেন। স্বাদে বিরিয়ানির মতো না হলেও ঘরোয়া খিচুড়ির পরিচিত স্বাদ পাবেন। নীচে লিঙ্ক দিলাম:

    বন্ধুর বাড়ি যেও না!

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্য পুরস্কার

একটু নয়, প্রচুর দেরি করেই – ইয়ে কি বলে আবার একটু ঢাক পেটাপিটি করি| তবে সেদিক থেকে ধরতে গেলে ভবিষ্যতে আমার ডিজে হওয়ার রাস্তাও খুলছে হয়তো পরোক্ষ ভাবে| আসল সাফাই হলো ‘আমার মতো’ যারা কাজ করেন, তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে এপ্রিল মে থেকে কাজের স্বাভাবিক চাপ শুরু হয় আর তা বাদে যেহেতু ব্যক্তিগত ভাবে আমার পুরস্কার-টুরস্কার পাওয়ার সেরকম অভ্যাস নেই, সেই দিক থেকে - তবে ঘটনা, একবছরে পরপর দুবার পুরস্কার প্রাপ্তি আর তার সাথে ইদানীন গপ্পো লেখারও ঝোঁক বেড়েছে খানিক, কাজেই সবে মিলে ... যাকগে! জ্ঞানীগুনী যারাই আছেন তাদের কাছে ব্যাখ্যা করার দরকার না হলেও, সাধারণ মানুষ হয়তো কৌতুহলী হবেন যে এই উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্যের ব্যাপারটা কি! দেখুন, মানুষ একটি অদ্ভুত জন্তু – সেভাবে বলতে গেলে এদের রাম-টু-রম রেশিও অন্যান্য জন্তুর তুলনায় অনেক বেশি মানে একোয়ারড মেমরির থেকে প্রিন্টেড মেমরি অনেক কম| জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা খুবই কম, তাও আমার সেকেন্ডারি ব্রেন, মানে ইন্টারনেট থেকে যা জানা, মানব মস্তিষ্কের ডানদিক আমাদের সাথে বেজায় মজার মজার খেলা খেলে! কল্পনা, সৃজনশীলতা – এগুলি অন্য জন্তুদের ভিতর সেভাবে প্রকট কি? হয়ত

নতুন এডভেঞ্চার

“সারাজীবন কলম পিষে কাটাতে চাও নাকি – হ্যাহ? ভালো!” সমুকে তার ব্যাগ থেকে তার বইয়ের পাঁজা বের করতে দেখে পল্টন বললো| “কেন? তুমি কি করতে চাও?” আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো সমু| “আমার ভাই ওসব পোষাবে না – আমি চাই এডভেঞ্চার! সারাজীবন অফিস-কাছারিতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে থেকে চাকরি বাকরি করা – এহে, সে আমার ধাতে নেই| যারা জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে না, তাদের হয়তো … যাক গে!” হাত উল্টোল পল্টন| এরকম খাপছাড়া ছেলের সাথে একসাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে একটা বাড়িতে একসাথে থাকতে হবে, সেটা ভাবলেই সমু রীতিমতো তিতিবিরক্ত হচ্ছে| কিন্তু এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও দেখা যাচ্ছে না – সমু’র মাসি-মেসো তার মাসতুতো দিদির বাড়ি নিমন্ত্রনে গিয়েছে, মাসতুতো দাদা সৌগতকে ব্যবসার কাজে অন্য শহরে না গেলেই নয় – বাড়ি ফাঁকা| সমু কলেজ শেষ করে আপাতত বেকার, চাকরি-বাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, সৌগত তাকে বলেছিলো যে অন্তত মাসি-মেসো ফেরা অব্দি সে যদি তাদের বাড়ি থাকতে পারে| গ্রাজুয়েশনের পর থেকে এযাবত কেবল বাড়ি-কোচিং সেন্টার, কোচিং সেন্টার-বাড়ি করে সমুও হাঁফিয়ে উঠেছিলো, কাজেই এমন একটা আউটিংএর সুযোগ পেয়ে সেও লাফিয়ে উঠলো| সেই মতো সমু এক সপ্তাহের মতো জামাক

কিছু কিছু দেখা

আমি বেশি কিছু দেখিনি, কিন্তু কিছু কিছু দেখেছি - খুব ভালো লাগে| সে অনেক দিন আগের কথা ... উহু রুপকথা নয়, আমি তখন তিন চার বছর - কোলাঘাটে থাকি| আমার বাবা বাইকের ডায়নামো ডিসএসেম্বেল করছিলো - ওয়ারিং মনে রাখতে একটা কাগজে এঁকেও রাখছিলো সাথে সাথে| আমিও বাবার দেখা দেখি আরেকটা কাগজে সেই রকম আঁকিবুঁকি করতে শুরু করলাম| বাবা আমার বাহাদুরি দেখে পরের মাসেই আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিলো| সেই স্কুলে কিরকম কি দেখেছি, বেশিরভাগই ভুলে গেছি| তবে আমায় প্রথমেই একটা ইঁদুর আঁকতে দিয়েছিলো সেটা মনে আছে - আর সেটা 'কেন করবো' মনে করে নকল করতে করতে দেখছিলাম পাশে আর একটা বড় ছেলে 'ঘরের মধ্যে পড়তে বসেছে, এরকম একটা ছেলের লাল জামার নিচে সাদা প্যান্টে' আচ্ছা করে সাদা প্যাস্টেলই ঘসছে| আমি বোকার মতো জিজ্ঞাস করলাম 'কাগজেই তো সাদা আছে!' সে আমার বোকামি শুধরে দিলো - 'উহু আরও সাদা করতে হবে|' কিন্তু সেই ছবিতে কমলা ছাদ, খয়েরি বাক্স আর বাইরের কচি-কলাপাতা-সবুজ মাঠের ওপারে গাড় সবুজ ঝোপঝাড় দেখে খুব সুন্দর লেগেছিলো - মনে আছে| তারপর কি হলো জানিনা - মনে নেই আমার - পাঁচ বছর বয়সে বসিরহাট এলাম| ভাড়াব