সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্য পুরস্কার

একটু নয়, প্রচুর দেরি করেই – ইয়ে কি বলে আবার একটু ঢাক পেটাপিটি করি| তবে সেদিক থেকে ধরতে গেলে ভবিষ্যতে আমার ডিজে হওয়ার রাস্তাও খুলছে হয়তো পরোক্ষ ভাবে|

আসল সাফাই হলো ‘আমার মতো’ যারা কাজ করেন, তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে এপ্রিল মে থেকে কাজের স্বাভাবিক চাপ শুরু হয় আর তা বাদে যেহেতু ব্যক্তিগত ভাবে আমার পুরস্কার-টুরস্কার পাওয়ার সেরকম অভ্যাস নেই, সেই দিক থেকে - তবে ঘটনা, একবছরে পরপর দুবার পুরস্কার প্রাপ্তি আর তার সাথে ইদানীন গপ্পো লেখারও ঝোঁক বেড়েছে খানিক, কাজেই সবে মিলে ... যাকগে!

জ্ঞানীগুনী যারাই আছেন তাদের কাছে ব্যাখ্যা করার দরকার না হলেও, সাধারণ মানুষ হয়তো কৌতুহলী হবেন যে এই উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্যের ব্যাপারটা কি!

দেখুন, মানুষ একটি অদ্ভুত জন্তু – সেভাবে বলতে গেলে এদের রাম-টু-রম রেশিও অন্যান্য জন্তুর তুলনায় অনেক বেশি মানে একোয়ারড মেমরির থেকে প্রিন্টেড মেমরি অনেক কম| জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা খুবই কম, তাও আমার সেকেন্ডারি ব্রেন, মানে ইন্টারনেট থেকে যা জানা, মানব মস্তিষ্কের ডানদিক আমাদের সাথে বেজায় মজার মজার খেলা খেলে! কল্পনা, সৃজনশীলতা – এগুলি অন্য জন্তুদের ভিতর সেভাবে প্রকট কি? হয়তো তাদের ফর্মে – তাদের মতো করে আছে, কিন্তু মানুষ – ব্যাপক আজব জিনিস|

ইতিহাস ছেলেবেলা থকে আতঙ্কের বস্তু হওয়ার দরুন ... সে অন্য গল্প, তবে যতদুর জানি – সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মধ্যে গল্প শোনা, তারপর পড়া, তারপর দেখা – এই চাহিদা গুলো রয়েইছে, মানুষ উদ্বর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতি থেকে খুঁজে নিয়েছে অস্ত্র, বানিয়েছে যন্ত্র, উপলব্ধি করেছে বিজ্ঞান, আর তার সাথে উদ্ভাবন করেছে প্রযুক্তি| ভাবলে অবাক হতে হয় এই ‘ফ্যাকাসে নীল বিন্দু’র মধ্যে কত কিছু ঘটেছে আর ঘটে চলেছে মহাকালের লম্বা দাগের উপর একটা তুচ্ছাতিতুচ্ছ দৈর্ঘ্যে!

যাই হোক সেই কবে কোন আদিম শিকারী কিভাবে একটা বাইসন শিকার করলো সে তার বাচ্চাদের কাছে হাত-পা নেড়ে নেচে-কুঁদে বর্ণনা দিলো থেকে শুরু করে আজকের হাইপার রিয়েলেস্টিক ভিফেক্সের গুনে অতিবিশ্বাসযোগ্য মুভি – মিডিয়া আবিষ্কার ও তার বিবর্তনের ফসল – কেন? মানুষের কল্পনা ও গল্প ‘নেওয়া’র চাহিদা|

লেখালিখিও ভেবে দেখুন, ছবির ভাষা থেকে শুরু করে আজকের বাইনারি এস্কি, এনসি বা উইনিকোড| পাথরের দেওয়াল থেকে যে গল্প শুরু হয়েছিল তা এখন আপনার হাতের মধ্যে – যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় পড়তে পারেন| আমার বাহাত্তর ঘনফুটের সম্পত্তির থেকে অনেক বেশি কিছু এখন চাইলে আমার টেবিলের উপর বা আমার হাতের মধ্যেই রাখতে পারি| আশ্চর্য নয় কি?

মুর’স ল জানেন কি? এখানেও অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে – প্রসেসরের ভিতর ত্রান্জিস্তরের সংখ্যাবৃদ্ধি সংক্রান্ত ভবিষ্যতবাণী একটি, পারলে গুগ্লিয়ে বা উইকিয়ে দেখে নেবেন| কিন্তু কোনো এক সময়ে সেই উপাত্ত ভ্রান্ত হয় এবং ভাবলে অবাক হবেন যে ৮০৮৫ এককালে চাঁদে গিয়েছিলো, তার ভাই-বোনেরা মুভিং ডিসপ্লে জ্বালিয়ে আজ অবসর নেওয়ার মুখে|

যতদুর মনে হয় পুরোটাই একটা ষড়যন্ত্র! মানুষ আদপে বড়ই আশ্চর্জন্তু – আমার মতো অনেকেই, হয়তো বেশিরভাগই সেকেন্ডারি ব্রেনের উপর নির্ভরশীল, এএক্ভাবে| কিন্তু ষড়যন্ত্র যেটা মনে হয় – আসলে আমরা যারা নিজেরদের বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা মনে করি – তা নয়, কোনো মহৎ ‘জিনিষ’ আমাদের দিয়ে কিছু একটা করাচ্ছে – যাতে আমরা সবাই আমাদের সত্যি সত্বাকে অনুভব করতে পারি – আমাদের উদ্দেশ্য অনুভব করতে পারি – আমরা বিচ্ছিন্ন কোনভাবেই নই, আমরা আদপেই একটা সংযুক্ত জাতি|

আমি যদি কাগজে একটি গল্প লিখি, সেটি বরজোর তিন-জন, পাঁচ-জনকে পড়াতে পারি| বই ছাপলে হয়তো তার বেশি – কিন্তু আমাদের সংযুক্তির সব থেকে সহজ মাধ্যম, ইন্টারনেট – সেখানে? কম আয়াসে সব থেকে বেশি লোকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার এর কোনো বিকল্প মাধ্যম আছে কি?

চারটি ওয়েব ম্যাগাজিন আর কিছু সহযোগী সংস্থার পক্ষ থেকে এবছরই চালু হলো উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্য পুরস্কার – যারা ওয়েব মাধ্যমে গল্প লেখেন, তাদের উত্সাহ প্রদান করবার এক উদ্যোগ|

ইয়ে, জনগণ জানেন যে আমার লেখাপড়া বা বুদ্ধিমত্তা সেরকম জুতের নয়, কাজেই ‘ছেলেপিলে’র গল্পগাছার বাইরে এই ধেড়ে বয়সেও বেশি কিছু পড়ে উঠতে পারিনি| বলতে লজ্জাও নেই যে এককালে ছোটদের জন্যে বিলিতী নানা ব্লগজিন, ওয়েবজিন দেখে একসময়ে হতাশ হয়ে ভেবেছি বাংলায় এমন চমত্কার জিনিষ হয় না কেন? তাহলে গরীব বেচারা ফিরিতে খানিক মজা পেতে পারতো!

সময়ের সাথে সাথে সে আশাও পূর্ণ হয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্যে নেই নেই করেও অনেক ভালো ভালো জিনিস ও তৈরী করেছেন অনেক ভালো ভালো মানুষ|

জনগণ এটাও জানেন বোধকরি আমি একজন গরীব কারিগর, টুকটাক ছবিতবি এঁকে সামান্য রোজগার করি, কাজেই যেকোনো ‘নিঃস্বার্থ’ প্রকল্পে যোগদ্ন করা আমার পক্ষে খানিকটা বিলাসিতাই হয়ে যায় – কিন্তু – কিন্তু, যদি পুরু আর আলেকজান্ডারের গল্পটা আরেকবার ভাবেন – পেশাদারিত্ব বলতে কেবল অর্থ বোঝায় না, একজন আরেকজনের সময় ও প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেবেন ও সেইভাবে পুরো জিনিসটা যাতে সেইভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন – সেটা সব থেকে বড় জিনিষ|

একট বিখ্যাত প্রকাশনালয়ের কর্ণধারের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছিল, যখন শিল্প নির্দেশকের ব্যাপারে কথা হলো, শুনলাম এখানে ওসব লাগে না – বা হয় না| বেশিরভাগ প্রকাশকের সাথে কাজ করতে গিয়ে তাদেরকে আগে এফেক্টিভ ব্রিফিং শেখাতে হয়েছে, একজন পুরো গল্প পড়াতে চাইলে তাকে এটাও বলতে হয়েছে যে তার জন্যে আলাদা পয়সা দিতে হবে – হা হা! পেশাদারিত্বের অভাব কি? নাকি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা? লেখক গল্প লেখেন তার নিজের মর্জিতে, নিজস্ব কল্পনায় – একজন অলঙ্করণ শিল্পীও যদি সেই রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন, তাহলে গল্পের সাথে যোগ্য সঙ্গত হবে তো?

আমার অভিজ্ঞতায় একটির ওয়েব্ম্যাগের সম্পাদক যথেষ্ট এবং যথাযথ পেশাদারি দায়িত্বপূর্ণ মানুষ| যেহেতু তিনি আমার সীমাবদ্ধতা বোঝেন সেকারণে সেইভাবেই তিনি সব কিছু বন্দোবস্ত করেন| ঠিকঠাক কর্মপদ্ধতি – কাজেই দুপক্ষের খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক| এবং পত্রিকাও যদি ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দের বিভাগের উপর হয়, তাহলে তো ...

বন্ধুগণ, বিলম্বিত হলেও সাধুবাদ জানাই উত্তরাধিকারকে এবং ধন্যবাদ সেই সম্পাদককে, যিনি আমার প্রচুর বাগরম্বর সহ্য করে পরোক্ষে আমাকে এই পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন|

তার সাথে পাশাপাশি সমস্ত ওয়েবম্যাগের প্রতি অনুরোধ – তাদের উদ্যগ্গকে খানিকটা হলেও অর্থনৈতিক ভাবে ভাববার জন্যে| ছাপা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পত্রিকা চালাবার পথ সুগম করে, পত্রিকার দাম সাধ্যে রাখতে সুযোগ করে| যেহেতু আমি চাষা মানসিকতার মানুষ, কাজেই বিশ্বাস করি জমিতে উন্নত ফসল ফলাতে উন্নত বীজের সাথে সার ও সেচেরও প্রয়োজন| কখনো এটা আশা করি না যে অলাভজনক কোনো উদ্যোগ থেকে ব্যাক্তীয়ত লাভ করবো, কিন্তু এটা আশা রাখতেই পারি যে একদিন ওয়েব্মাধ্যমও স্বাবলম্বী হবে – বাজারে চলতে থাকা নানা ওয়েব সিরিজ, বিতরণ ও বিপণনের দিক থেকে উদাহরণ হতে পারে| কদিন আগেই দেখলাম একটি বিখ্যাত প্রকাশনীর একটি পত্রিকা ছাপা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন তারা, কিন্তু সাথে সাথে তার ইন্টারনেট ভার্সন চালু থাকবার বন্দোবস্তও দেখলাম – ডিজিটালই কাগজের উত্তরসুরী| সে উত্তরাধিকার যাদের হাতে তারা আশা করি সেইভাবেই ভাববেন – লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মধ্যে ‘রক্ত চলাচল’ যাতে ঠিকঠাক থাকে সে ব্যাপার আজ না হলেও আশা করা যায় অনতিবিলম্বেই সুরাহা হবে|

ও হ্যাঁ – গপ্পো, ইন্টারনেটের দয়ায় যেহেতু লেখা ‘পাঠানো’ আজকাল তেমন সমস্যা নয়, কাজেই সাহস করে ফাইন ফাইন গপ্পোও লেখবার চেষ্টা করছি ইদানীন, বুঝলেন?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নতুন এডভেঞ্চার

“সারাজীবন কলম পিষে কাটাতে চাও নাকি – হ্যাহ? ভালো!” সমুকে তার ব্যাগ থেকে তার বইয়ের পাঁজা বের করতে দেখে পল্টন বললো| “কেন? তুমি কি করতে চাও?” আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো সমু| “আমার ভাই ওসব পোষাবে না – আমি চাই এডভেঞ্চার! সারাজীবন অফিস-কাছারিতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে থেকে চাকরি বাকরি করা – এহে, সে আমার ধাতে নেই| যারা জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে না, তাদের হয়তো … যাক গে!” হাত উল্টোল পল্টন| এরকম খাপছাড়া ছেলের সাথে একসাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে একটা বাড়িতে একসাথে থাকতে হবে, সেটা ভাবলেই সমু রীতিমতো তিতিবিরক্ত হচ্ছে| কিন্তু এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও দেখা যাচ্ছে না – সমু’র মাসি-মেসো তার মাসতুতো দিদির বাড়ি নিমন্ত্রনে গিয়েছে, মাসতুতো দাদা সৌগতকে ব্যবসার কাজে অন্য শহরে না গেলেই নয় – বাড়ি ফাঁকা| সমু কলেজ শেষ করে আপাতত বেকার, চাকরি-বাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, সৌগত তাকে বলেছিলো যে অন্তত মাসি-মেসো ফেরা অব্দি সে যদি তাদের বাড়ি থাকতে পারে| গ্রাজুয়েশনের পর থেকে এযাবত কেবল বাড়ি-কোচিং সেন্টার, কোচিং সেন্টার-বাড়ি করে সমুও হাঁফিয়ে উঠেছিলো, কাজেই এমন একটা আউটিংএর সুযোগ পেয়ে সেও লাফিয়ে উঠলো| সেই মতো সমু এক সপ্তাহের মতো জামাক

কিছু কিছু দেখা

আমি বেশি কিছু দেখিনি, কিন্তু কিছু কিছু দেখেছি - খুব ভালো লাগে| সে অনেক দিন আগের কথা ... উহু রুপকথা নয়, আমি তখন তিন চার বছর - কোলাঘাটে থাকি| আমার বাবা বাইকের ডায়নামো ডিসএসেম্বেল করছিলো - ওয়ারিং মনে রাখতে একটা কাগজে এঁকেও রাখছিলো সাথে সাথে| আমিও বাবার দেখা দেখি আরেকটা কাগজে সেই রকম আঁকিবুঁকি করতে শুরু করলাম| বাবা আমার বাহাদুরি দেখে পরের মাসেই আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিলো| সেই স্কুলে কিরকম কি দেখেছি, বেশিরভাগই ভুলে গেছি| তবে আমায় প্রথমেই একটা ইঁদুর আঁকতে দিয়েছিলো সেটা মনে আছে - আর সেটা 'কেন করবো' মনে করে নকল করতে করতে দেখছিলাম পাশে আর একটা বড় ছেলে 'ঘরের মধ্যে পড়তে বসেছে, এরকম একটা ছেলের লাল জামার নিচে সাদা প্যান্টে' আচ্ছা করে সাদা প্যাস্টেলই ঘসছে| আমি বোকার মতো জিজ্ঞাস করলাম 'কাগজেই তো সাদা আছে!' সে আমার বোকামি শুধরে দিলো - 'উহু আরও সাদা করতে হবে|' কিন্তু সেই ছবিতে কমলা ছাদ, খয়েরি বাক্স আর বাইরের কচি-কলাপাতা-সবুজ মাঠের ওপারে গাড় সবুজ ঝোপঝাড় দেখে খুব সুন্দর লেগেছিলো - মনে আছে| তারপর কি হলো জানিনা - মনে নেই আমার - পাঁচ বছর বয়সে বসিরহাট এলাম| ভাড়াব