সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নতুন এডভেঞ্চার

“সারাজীবন কলম পিষে কাটাতে চাও নাকি – হ্যাহ? ভালো!” সমুকে তার ব্যাগ থেকে তার বইয়ের পাঁজা বের করতে দেখে পল্টন বললো|
“কেন? তুমি কি করতে চাও?” আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো সমু|
“আমার ভাই ওসব পোষাবে না – আমি চাই এডভেঞ্চার! সারাজীবন অফিস-কাছারিতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে থেকে চাকরি বাকরি করা – এহে, সে আমার ধাতে নেই| যারা জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে না, তাদের হয়তো … যাক গে!” হাত উল্টোল পল্টন|

এরকম খাপছাড়া ছেলের সাথে একসাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে একটা বাড়িতে একসাথে থাকতে হবে, সেটা ভাবলেই সমু রীতিমতো তিতিবিরক্ত হচ্ছে|

কিন্তু এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও দেখা যাচ্ছে না – সমু’র মাসি-মেসো তার মাসতুতো দিদির বাড়ি নিমন্ত্রনে গিয়েছে, মাসতুতো দাদা সৌগতকে ব্যবসার কাজে অন্য শহরে না গেলেই নয় – বাড়ি ফাঁকা| সমু কলেজ শেষ করে আপাতত বেকার, চাকরি-বাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, সৌগত তাকে বলেছিলো যে অন্তত মাসি-মেসো ফেরা অব্দি সে যদি তাদের বাড়ি থাকতে পারে| গ্রাজুয়েশনের পর থেকে এযাবত কেবল বাড়ি-কোচিং সেন্টার, কোচিং সেন্টার-বাড়ি করে সমুও হাঁফিয়ে উঠেছিলো, কাজেই এমন একটা আউটিংএর সুযোগ পেয়ে সেও লাফিয়ে উঠলো|
সেই মতো সমু এক সপ্তাহের মতো জামাকাপড় আর বইপত্র-মডেল কোশ্চেন পেপারস পোঁটলা-পুঁটলি বেঁধে চলে এলো মাসির বাড়ি| কিন্তু এসে …
“আরে সৌগতদা আমাকেও তো বলেছিলো, আমি এখানেই মেসে থাকি আপাতত – কদিন আগে ক্লাবে আমায় বলেছিলো যে ওরা সবাই থাকছে না, তাই আমি যদি …| ভালই হলো, কাকুরা না ফেরা অব্দি এখানেই একসাথে ডেরা গাড়া যাবে, কি বলো?” হাসতে হাসতে বললো পল্টন|
সপ্তাখানেক মন দিয়ে জমিয়ে পড়া যাবে বলে একরকম মনস্থির করে এসেছিলো সমু| কিন্তু এখন আর সেই মুডটাই আর আসছে না|
পল্টনকে লুকিয়ে সৌগতদাকে একবার ফোনও করে নিয়েছিলো সমু - হ্যাঁ, ছেলে সত্যি কথাই বলছে| তা বাদে ভালো ছেলে, পরোপকারী ছেলে, এডভেঞ্চারাস ছেলে এরকম একগাদা সার্টিফিকেটও দিলো সৌগতদা – ওরা একসাথে থাকলে দিব্যি জমবে, ইত্যাদি ইত্যাদি| কিন্তু সেই যে একবার মন খুঁতখুঁত শুরু হয়ে গেলো, ব্যাস সমু ঠিক করে নিলো নিয়মরক্ষার মতো দু-চারদিন থেকে তারপরে সৌগতদাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে টুক করে কেটে পড়বে|

কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হলো যখন দুদিন পর ড্রেনের জল ছাপিয়ে রাস্তায় উঠতে শুরু করলো!

“ভাই সমু, ভাবগতিক ভালো দেখছি না – বুঝলে? গত বছরের আগের বছরও এমন হয়েছিল, জানো? লম্বা বৃষ্টির পর …”
“বন্যা?” ঢোঁক গিললো সমু|
“হ্যাঁ, উরি কি জল! কি জল! ভাগ্যিস এ শহর উঁচু ডাঙায়, নয়তো …”
“সব ডুবে যায় নাকি?”
“গ্রামের দিকে তো হালত খারাপ, তবে এখানে কি অবস্থা হয় এখনো তো বুঝতে পারছি না|”
টিভিতে তো দেখেইছিল সে, আর সেবার মেসোমসাইয়ের কাছেও সমু শুনেছিলো যে একতলার ঘরদোর বন্যার জলে থৈ থৈ অবস্থা! সেকথা মনে পড়ে যেতেই আতঙ্কে আরেকবার ঢোঁক গিললো সে| একটাই নিশ্চিন্তের বিষয় মাসিদের বাড়িটা দোতলা| ওরা আপাতত একতলায় থাকলেও যদি সেবারের মতো অবস্থা হয় তবে দিব্যি দোতলায় চলে যেতে পারে তারা| কিন্তু তারপরেও যদি ...

“তাহলে কি হবে?”
“কি আর হবে – দিব্যি এডভেঞ্চার হয়ে যাবে, রবিনসন ক্রুসোর মতোই!” তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বললো পল্টন, “এক কাজ করা যাক চলো, রান্নাঘরের হালত তো ঠিকই আছে, কিন্তু তাহলেও আপাতত খানিক চাল-ডাল এনে রাখা যাক| যদি গতবারের মতো অবস্থা হয়্ তাহলে রিলিফ আসাতক দিব্যি চালিয়ে নেওয়া যাবে|”, একই ভাবে বললো পল্টন, আর স্বাভাবিক ভাবেই সেটা পছন্দ হলো না সমু’র|
“চলো তাহলে, সেই বন্দোবস্তই করা যাক|” তেতো গেলা গলায় বললো সে|

কেবল চাল-ডাল নয়, তার সাথে গুচ্ছখানিক ডিম, আলু, বিস্কুট এসবও বাজার করা হলো| দুজনে চারটে ব্যাগ বইতে গিয়ে হাঁফিয়ে গেলো প্রায়|
বাড়ি ফেরবার পর ঘন্টা দুয়েকের মাথায় স্পষ্ট হলো যে – হ্যাঁ বন্যা হচ্ছেই| রাস্তার জল গোড়ালি ছাপিয়ে উপরে উঠলো| টিভিতে লাল সতর্কতার কথা শুনতে শুনতেই কারেন্ট চলে গেলো| আর মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে গেলো তার আধ ঘন্টা পর|
ততক্ষণে অবশ্য সমু আর পল্টন দুজনেই তাদের বাড়ি যোগাযোগ করে পরিস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে| সৌগতদা আর মেসোমসাইয়ের সাথেও কথা হয়ে গেছে তাদের| ভদ্রতা করেই তারা কেবল একতলায় থাকছিল এই ক’দিন, কিন্তু ওরা সবাই বারবার করের বললো যাতে সমু আর পল্টন সময় নষ্ট না করে দোতলায় উঠে যায়| ঘরদোর এমনিই সব শিকল আটকানো আছে, চাবি-টাবি দেওয়া নেই – কাজেই তারা স্বচ্ছন্দে তাদের পছন্দ মতো জায়গায় থাকতে পারে – ইত্যাদি ইত্যাদি|

সেই মতো সমু আর পল্টন ঘন্টাখানেকের মেহনতে যখন প্রায় সমস্ত রান্নাঘর দোতলায় তুলে এনে সিঁড়ির ল্যান্ডিংএ বসে হাঁফাতে লাগলো তখন রাস্তা থেকে জল একতলার দরজার চৌকাঠের নিচে দিয়ে ধীরে ধীরে ঘরের ভিতর ঢুকতে শুরু করেছে|
সমু আতঙ্কের চোখে পল্টনের দিকে তাকালো, কিন্তু পল্টন ঠোঁট ছুঁচলো করে নির্বিকার ভাবে জল দেখছে দেখে সমু’র গা জ্বালা করে উঠলো|

মাসির বাড়ি সেই ক্লাস সেভেনে না এইটে পড়াকালীন শেষ এসেছিলো সমু| সেসময়ে তার মনে আছে মাসির বাড়িটা একতলা ছিল| দোতলাটা তার পরে হয়েছে বলে নতুন ঘরদোরগুলো তার দেখা নয়|

“উরি-ত্তারা! এ কি অবস্থা মাইরি!” কোনো একটা ঘর থেকে পল্টনের চিত্কার শুনতে পেলো সমু|
হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখে একটা ঘরে দাড়িয়ে আছে পল্টন, তার সামনে মেঝে থেকে প্রায় ছাদ পর্যন্ত উঠে যাওয়া বিশাল বিশাল চারটে আলমারি বোঝাই করা বই|
সমু এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারে এটাই মাসি-মেসোমসাইয়ের বেডরুম হবে হয়তো| মেসোর পড়ার নেশা আছে জানতো সে, কিন্তু দেওয়াল জোড়া আলমারি বোঝাই বইয়ের বহর দেখে পল্টনের মতই তার মুখও হাঁ হয়ে যায়!
“এতো একদম লাইব্রেরী!” এই প্রথম পল্টনের কথা শুনে সমু’র গায়ের মধ্যের সেই তিতকুটে ভাবটা এলো না এখন!

চারদিন কেটে গেছে, বৃষ্টি হয়ে চলেছে সমানে কিন্তু তার এখন বেগ আর আগের মতো নেই| জল গুটিগুটি সিঁড়ির পাঁচটা ধাপ পেরিয়ে ষষ্ঠ ধাপের দিকে এগুচ্ছে|
সমু আর পল্টন যেদিন দোতলায় উঠেছিলো তার পরদিন থেকেই প্রায় তাদের মধ্যে আর বাক্যালাপ নেই| কারণ?

“ফ্রাইডে, এবার ডিমের খোসাগুলো ছাড়িয়ে ফেলো তো!” সদ্য নামানো ভাতের ভিতর থেকে হাতায় করে দুটো ডিম খুঁজে বের করে একটা বাটিতে রাখতে রাখতে বললো পল্টন|
“কি বললে?” চড়াত করে মাথায় রক্ত উঠে গেলো সমু’র, “ফ্রাইডে?”
“আরে – আমরা এখন রবিনসন ক্রুসো খেলছি তো!” একগাল হেসে জবাব দিলো পল্টন|
“আমি ফ্রাইডে!”
“কি আশ্চর্য্য রাগ করলে নাকি?” একটু থতমত খেয়ে গেলো পল্টন, “আরে আমি সেভাবে বলিনি|”
“তুমি হলে বীরবাহাদুর রবিনসন ক্রুসো, আর আমি … আমি …” রাগে কথা জড়িয়ে যায় সমু’র “আমি তোমার চাকর নাকি? হ্যাঁ?”
“আরে না না! আমি তো সেভাবে …” কৈফিয়ত দিতে চায় পল্টন| “তুমিও পড়েছ নাকি? আমি ভাবলাম তুমি স্টুডিয়াস ছেলে তো, তাই হয়তো পড়ার বইয়ের বাইরে সেরকম … তাই মজা করে …”

আর এইভাবেই একরকম আড়ি হয়ে গেলো সমু আর পল্টনের মধ্যে|

সারাদিনের মধ্যে কাজ কেবল রান্না করা-খাওয়া-ঘুমোনো আর ঘুমোনো-রান্না করা-খাওয়া, মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে পাশের বাড়িদের থেকে কিছু খবরাখবর নেওয়া – ব্যাস| কারেন্ট তো সেই গেছে কবে আসবে কেউ বলতে পারে না| মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, ওতে যে টুকটাক গেম খেলে সময় কাটানো যাবে সে পরিস্থিতিও নেই, কারণে চার্জের অভাবে ওদের দুজনের হ্যান্ডসেটই গতকাল থেকে বন্ধ| ওরা চিলেকোঠার ঘরে একটা রেডিও আবিষ্কার করেছিলো, কিন্তু খুলে দেখা গেলো যে তিনটে ব্যাটারির মধ্যে একটা গলে গিয়ে তার থেকে এসিড বেরিয়ে পড়েছে – সেটা শেষ কবে চালানো হয়েছিল কে জানে|

অতএব? অতএব চারদিনের থেকে ওদের দুজনকেই দেখা গেলো মেসোমশাইদের শোয়ার ঘরের বিছানার দুদিকে কেউ চিত্ হয়ে আর কেউ উপুড় হয়ে মেসোমশাইয়ের বিশাল সংগ্রহ হাতড়াতে – মানে বইয়ের আলমারি চারটের কোনটাতেই যেহেতু চাবি লাগানো ছিল না তাই তারা দুজনে দুটো আলমারি বেছে নিয়ে রান্না করা-খাওয়া-ঘুমোনো আর ঘুমোনো-রান্না করা-খাওয়ার মাঝের লম্বা লম্বা ফাঁকগুলো বই ঘেঁটেই কাটাতে শুরু করলো|

পড়বার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে পল্টনের ‘ধ্যুত ধ্যুত’ আওয়াজ শুনে সমু আড়চোখে পল্টন কি বই পড়ছে দেখে আন্দাজ করতে পারে পল্টন গোয়েন্দা, এডভেঞ্চার বা থ্রিলার এতো বেশি পড়ে ফেলেছে এযাবত যে মেসোমশাইয়ের সংগ্রহ তাকে নতুন কিছু দিতে পারছে না|
আবার ইতিহাস-ভূগোল-বাংলা-বিজ্ঞানের নানা বই পড়তে পড়তে সমু’রও বেজায় একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছে এবারে| কি করা যায়?
“ভাই সমু, তোমার কাছে খাতা পেন আছে?” ইতস্তত করে জিজ্ঞাস করলো পল্টন|
খাতা, পেন, পেন্সিল সব তো গাদা করেই এনেছিল সমু তার ব্যাগ বোঝাই করে| “হু, আমার ব্যাগে দেখো|” আনমনেই বললো সমু, খাতা পেন পল্টনের কি কাজে লাগবে ভেবে মনে মনে একটু অবাক হলেও আর কোনো কৌতুহল দেখালো না সে|

বাইরে সমানে বৃষ্টি, কিন্তু এখন পরিমানে অনেক কম| সিঁড়িতে জলটা সেই পাঁচ নম্বর ধাপেই আটকে আছে এখনো – উপরে এগুনোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না সেরকম| এর পরদিন থেকে দেখা গেলো পল্টন জানালার ধারে বসে খুব মন দিয়ে খাতা পেন আর বই নিয়ে দিব্যি কিসব আঁকড়ি-বুকড়ি করছে| ‘ছেলেটা উন্মাদ হয়ে গেলো না তো?’ মনে মনে ভাবলেও সেরকম কোনো উচ্যবাচ্য করলো না সমু| বদলে মেসোমসায়ের আলমারি থেকে কটা বই তার মনোযোগ পুরোপুরি টেনে নিয়েছে, এখন তাই নিয়েই উত্তেজিত সে| এবার তারও একটু কাগজ কলম হলে সুবিধা হয়|

সপ্তাদুয়েক পরে রিলিফের লোকজন যখন তাদের এলাকায় এলো তখন দেখা গেলো দোতলার ঘরে হাঁড়িতে চালেডালে খিচুড়ি ফুটছে আর সমু আর পল্টন দুজনেই মুখে লম্বা দাড়ি-গোঁফ নিয়ে বই-খাতা-কলমে ব্যস্ত|

বৃষ্টি তো থেমে গেছেই তার সাথে এই শহরও বন্যামুক্ত হয়েছে প্রায় দিন কুড়ি পর| রিলিফের লোকেদের মাধ্যমে তারা দুজনেই তাদের যার যার বাড়ি খবর পাঠিয়ে দিয়েছিলো, কাজেই সকলেই নিশ্চিন্ত| একুশ দিনের দিন সৌগতদা চলে এলো| দিদির বাড়ি থেকে এখনো মাসি-মেসোকে ছাড়া হয় নি, আগে বাড়ি ঘর পরিষ্কার করে তারপরে তাদের নিয়ে আসা হবে|
“আমাদের জন্যে তোদের কি দুরাবস্থা|” সৌগতদা আক্ষেপ করে, “কোথায় ঘরের ছেলে ঘরে ছিলি, আর দেখ এরকম বন্যার মধ্যে আটকে গেলি!”
“আরে না না! তুমি ওরকম ভেবো না – প্রকৃতির উপরে তো আমাদের কারুরই কোনো হাত নেই না?” সমু সান্তনা দেয়|
“কি যে বলনা সৌগতদা! দিব্যি ছিলাম – নিজেরা রান্নাবাড়া করে – খাসা! একদম রবিন … যাকগে|” উচ্ছাসিত হতে গিয়ে সমু’র দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়েই কথা কেটে দেয় পল্টন|

দুবছর পর|

“হু, স্যাটেলাইট রিডিং অনুযায়ী রাজা গৌরবর্মার গড় এখানেই হওয়ার কথা|” মনিটরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বললেন ড: মৃনাল ব্যানার্জি, আর্কীওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় নির্দেশক, “কোঅর্ডিনেট এরকমই হতে পারে|”
“স্যার আমাদের ক্যালকুলেশনও কিন্তু এরকমই|” মাথা নেড়ে সায় দিলো সদ্য ট্রেনিং শেষ করে আসা এ.এস.আই-এর নতুন ফিল্ড অফিসার পার্থপ্রতিম সান্যাল, তারপরে সমর্থনের জন্যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক অফিসারের দিকে তাকালো সে|
“আর তাছাড়া ডক্টর মহেন্দ্র পালের ‘উত্তর বঙ্গের ইতিহাস’ বা প্রফেসর সনত খাস্তগীরের ‘বর্মাবংশ’ এই দুটো বইতেও যে সব জনপদের কথা আছে সে অনুযায়ী গড়ের আনুমানিক অবস্থান হয়তো এটাই হবে|” পার্থপ্রতিম স্যান্যালকে সমর্থন করে বলে উঠলো সুমন দত্ত, সেও পার্থপ্রতিমের সাথে একই সাথে ট্রেনিং শেষ করে এসেছে|
সুমন দত্তের কথা শেষ হতেই পার্থপ্রতিম বললো, “আর তাছাড়া আমি ঐ এলাকার পাশ থেকেই এসেছি, মানে আমার জন্মস্থানের কথা বলছিলাম আর কি … যেরকম প্রচলিত কথা আছে সে অনুযায়ী আশা করি আমাদের হিসাব আর অনুমানের খুব একটা ভুল হবে না|”
দুজনের দিকে খুব মন দিয়ে দেখলেন ড: মৃনাল ব্যানার্জি| দুজনেই উদ্যমী তরুণ, অল্পদিনেই দুজনকে খুব পছন্দ হয়ে গেছে তার| ট্রেনিংএর রিপোর্ট অনুযায়ী পার্থপ্রতিম খুবই ডাকাবুকো আর সুমনের বিশ্লেষণী ক্ষমতা তীক্ষ্ণ| দুজনকে একসাথে ঠিকঠাক কাজে লাগানো গেলে ভারতের অজানা ইতিহাসের অনেক রহস্যই এরা সমাধান করতে পারবে|
“ওয়েল …” ড: মৃনাল ব্যানার্জি বললেন, “আশা করি আপনাদের উপর নির্ভর করতে পারি আমরা| আমরা লোকাল এডমিনিস্ট্রেশনকে যোগাযোগ করছি তাহলে, সেই মতো এগোনো যাক| যদি আপনাদের এক্সক্যাভেশন পারফেক্ট হয় তাহলে ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে”
“থ্যাঙ্ক ইউ স্যার!” পার্থপ্রতিম আর সুমন একগাল হেসে একসাথে বলে উঠলো, “আশা করি সব কিছু ঠিকঠাকই থাকবে আর আমরা রাজা গৌরবর্মার হারিয়ে যাওয়া দুর্গ খুঁজে বের করবই|”
“গুড লাক|” হেসে ওদের দুজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন ড: মৃনাল বর্মা|

ডিরেক্টরের অফিস থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে এল পার্থপ্রতিম সান্যাল ওরফে পল্টন আর সুমন দত্ত ওরফে সমু|
বন্যার ঐ কটা দিন দুজনে আড়ি হয়ে বেশ উপকারই হয়েছিল| সময় কাটাতে ইতিহাস-ভূগোল-অঙ্ক ঘাঁটতে ঘাঁটতে দুজনেই রপ্ত হয়ে ইউ.পি.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে আর্কীওলজিয়াল সার্ভেতে যোগ দিলো| পরীক্ষায় দেখা গেলো পল্টন অঙ্কের জোরে সমু’র থেকে বেশ কিছু নম্বরে এগিয়ে আছে| আর ওদিকে ইন্টারভিউতে সমু তার মেসোর আলমারি থেকে খুঁজে পাওয়া কটা দুস্প্রাপ্য বই থেকে ঝালাই করা জ্ঞানে পল্টনকে ধরে ফেললো| এখন দুজনেরই এডভেঞ্চারের চাকরি|
ট্রেনিংএর সময় থেকেই তারা খুব ভালো বন্ধু|

প্রকাশিত : ছাউনি ২০১৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্য পুরস্কার

একটু নয়, প্রচুর দেরি করেই – ইয়ে কি বলে আবার একটু ঢাক পেটাপিটি করি| তবে সেদিক থেকে ধরতে গেলে ভবিষ্যতে আমার ডিজে হওয়ার রাস্তাও খুলছে হয়তো পরোক্ষ ভাবে| আসল সাফাই হলো ‘আমার মতো’ যারা কাজ করেন, তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে এপ্রিল মে থেকে কাজের স্বাভাবিক চাপ শুরু হয় আর তা বাদে যেহেতু ব্যক্তিগত ভাবে আমার পুরস্কার-টুরস্কার পাওয়ার সেরকম অভ্যাস নেই, সেই দিক থেকে - তবে ঘটনা, একবছরে পরপর দুবার পুরস্কার প্রাপ্তি আর তার সাথে ইদানীন গপ্পো লেখারও ঝোঁক বেড়েছে খানিক, কাজেই সবে মিলে ... যাকগে! জ্ঞানীগুনী যারাই আছেন তাদের কাছে ব্যাখ্যা করার দরকার না হলেও, সাধারণ মানুষ হয়তো কৌতুহলী হবেন যে এই উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্যের ব্যাপারটা কি! দেখুন, মানুষ একটি অদ্ভুত জন্তু – সেভাবে বলতে গেলে এদের রাম-টু-রম রেশিও অন্যান্য জন্তুর তুলনায় অনেক বেশি মানে একোয়ারড মেমরির থেকে প্রিন্টেড মেমরি অনেক কম| জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা খুবই কম, তাও আমার সেকেন্ডারি ব্রেন, মানে ইন্টারনেট থেকে যা জানা, মানব মস্তিষ্কের ডানদিক আমাদের সাথে বেজায় মজার মজার খেলা খেলে! কল্পনা, সৃজনশীলতা – এগুলি অন্য জন্তুদের ভিতর সেভাবে প্রকট কি? হয়ত

কিছু কিছু দেখা

আমি বেশি কিছু দেখিনি, কিন্তু কিছু কিছু দেখেছি - খুব ভালো লাগে| সে অনেক দিন আগের কথা ... উহু রুপকথা নয়, আমি তখন তিন চার বছর - কোলাঘাটে থাকি| আমার বাবা বাইকের ডায়নামো ডিসএসেম্বেল করছিলো - ওয়ারিং মনে রাখতে একটা কাগজে এঁকেও রাখছিলো সাথে সাথে| আমিও বাবার দেখা দেখি আরেকটা কাগজে সেই রকম আঁকিবুঁকি করতে শুরু করলাম| বাবা আমার বাহাদুরি দেখে পরের মাসেই আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিলো| সেই স্কুলে কিরকম কি দেখেছি, বেশিরভাগই ভুলে গেছি| তবে আমায় প্রথমেই একটা ইঁদুর আঁকতে দিয়েছিলো সেটা মনে আছে - আর সেটা 'কেন করবো' মনে করে নকল করতে করতে দেখছিলাম পাশে আর একটা বড় ছেলে 'ঘরের মধ্যে পড়তে বসেছে, এরকম একটা ছেলের লাল জামার নিচে সাদা প্যান্টে' আচ্ছা করে সাদা প্যাস্টেলই ঘসছে| আমি বোকার মতো জিজ্ঞাস করলাম 'কাগজেই তো সাদা আছে!' সে আমার বোকামি শুধরে দিলো - 'উহু আরও সাদা করতে হবে|' কিন্তু সেই ছবিতে কমলা ছাদ, খয়েরি বাক্স আর বাইরের কচি-কলাপাতা-সবুজ মাঠের ওপারে গাড় সবুজ ঝোপঝাড় দেখে খুব সুন্দর লেগেছিলো - মনে আছে| তারপর কি হলো জানিনা - মনে নেই আমার - পাঁচ বছর বয়সে বসিরহাট এলাম| ভাড়াব