সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দশটি বইয়ের ফর্দ

ইন্দ্রনীল কাঞ্জিলাল-দাদা এক ধাক্কায় 'বই বালতি'তে ফেলে দিলেন আমাকে - এখন হাবুডুবু খাচ্ছি কাকে ছেড়ে কাকে ধরি! প্রথমেই সাফাই গেয়ে রাখছি আমি মুখ্যু-সুখ্যু মানুষ আর তাবাদে ছেলেপিলেদের বই পত্তর ছাড়া আর অন্যরকম বই পড়ার ইচ্ছা আমার জাগেনি সেরকম, কাজেই বইদের সম্পর্কে আমার মতামত জনগণ নিজগুনে ক্ষমা করে নেবেন|

বুদ্ধ - ওসামু তেজুকা

প্রথমে আমি ভল ৫ পাই আমার এক বসের কাছ থেকে, পড়ে মুগ্ধ হয়ে ১ 'সেখান থেকে' নামিয়ে পরি, কিন্তু সংগ্রহে রাখবার ইচ্ছায় বাকি গুলো আর নামাই নি, আবার সময়, সুযোগ ও সামর্থের অভাবে কিনেও উঠতে পারি নি এখনো| তবে আশায় আছি পুরো কাগুজে সেটটাই একসময়ে নামিয়ে ফেলবো, এবং এক সাথে এক নিশ্বাসে পুরোটাই পরে ফেলবো|
কোন সে দেশের কোন সাগরের পারে - রাশিয়ান রুপকথা'র সংকলন
কাগুজে বই অনেক ছেলেবেলায় কেবল একবারই পড়েছিলাম, 'আলতা জবার' ছোট কন্যে ও ভালো রাক্ষস, কালো মানিক - এরা কিরকম বন্ধু মতো হয়ে গিয়েছিলো সেই সময়ে| কিছুদিন আগে সেই ভালো বইটার কথা মনে পরে যাওয়ায় আমার আক্ষেপ শুনে এক বন্ধু ই-বইয়ের সন্ধান দেন, আবার পড়ে আবার নতুন করে ভালো লাগলো

আর কোনখানে - সম্ভবত লীলা মজুমদার

ছেলেবেলায় একটি ঠোঙ্গার দোকান থেকে মলাট ও প্রথম পাতা ছাড়া একটা বই পেয়েছিলাম, ফুটারে লেখা ছিল 'আর কোনখানে' - প্রথম কটি পাতা পড়ে ভালো লাগে নি সেরকম, কিন্তু অনেক দিন পরে কোনো এক অসুস্থতার সময়ে বইটি নিয়ে বসে পড়তে শুরু করলে দেখতে থাকি একটি মানুষ বা একটি পরিবারের জীবনযাপন কিভাবে রুপ্কথাময় হয়ে উঠতে পারে|
রানী শিবা'র কন্ঠহার (১ম পর্ব) - ইন্দ্রজাল কমিকস/বেতাল
কেন এরকম এটি আমার ভালো লাগে সেটা ব্যাখ্যার দাবি রাখে| আসলে এটা আমার পড়া প্রথম ইন্দ্রজাল কমিকস| হয়তো এটা এই তালিকায় নাও থাকতে পারতো, কিন্তু যেটা ঘটনা - অনেক দিন আগে আমার বইটা হারিয়ে গেলেও আজকেই এক বন্ধুর স্টোর-রুম সাফ করতে গিয়ে এটা আমার হাতে চলে এলো| তার সাথে সাথে চট করে একবার অতীত সফর করে এলাম, কাজেই এই বইটিকে এখানে না রাখাটা আমার ছোটবেলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যাবে|

ঝিলের ধারে বাড়ি - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শারদীয়া আনন্দমেলার সাথে পরিচয় হয় তখন আমি ক্লাস ৩ কি ৪এ পরি| আমার মামা আমাকে বইটি পড়তে দিয়েছিলেন, তো কমিকস-টমিকস পড়ার পরে যেটা সব থেকে বেশি চোখ টানলো সেটা হলো মজাদার দস্যুদলের সামনে আমার মতো বয়সী একটি ও তার থেকে একটু বড় একটি মেয়ের ছবি, তার পরে এক নিশ্বাসে পরে ফেললাম ঝিলের ধারে বাড়ি|

গীতা

হয়তো প্রত্যেক মানুষই একসময়ে নিজেকে বুঝতে চায়, জানতে চায় তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য| জীবনের এক পর্যায়ে আমারও সন্দেহ জেগেছিল 'কেন আমি?' মনে হলো এই বইটি থেকে কিছু উত্তর পেলেও পেতে পারি হয়তো| অনেক সন্দেহ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম, শুরুতেই গীতা সার পরে মনে হচ্ছিলো এটা কি আমার জন্যে? বহু বহু বার গীতা পড়েছি, তবে ঘুরে ফিরে বারবারই সেই একই জায়গায় ফিরে এসেছি| উত্তর খুঁজে পেয়েছি কি এখনো? ভালো লাগার বই নয়, তবে এটি আমার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই - যেটি আমাকে জীবন পথে চলতে অনেক সাহায্য করেছে এবং এখনো করে আসছে|

টং লিং - লীলা মজুমদার

হলদে পাখির পালক ও টং লিং নিয়ে দোনামনায় আছি - কোনটাকে ফেলে কোনটাকে ঢোকাই, তবে মনে হলো টং লিং-এর দাবিটা একটু বেশি| কল্প বাস্তবতার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় টং লিং পরে| শিশু সাহিত্যের লীলা অমনিবাস কিনি ক্লাস ৯-১০-এ পড়তে, প্রথমবার এমনি এমনিই পরি, তবে কলেজে পড়ার সময়ে যখন ফের টং লিং পড়তে বসি, সে সময়ে এমনিই উত্সাহিত হয়ে পড়েছিলাম যে মনে হয়েছিল এটার একটা চমত্কার সিনেমারূপ না দিতে পারলেই নয়! বলাই বাহুল্য সে আশা পূরণ হয় নি কখনো|

কৃষ্ণদ্বীপের রহস্য - হার্জ/টিনটিন

এটাও হয়তো ছেলেবেলার অপ্রাপ্তিবোধ থেকেই এই লিস্টিতে ঢুকে পড়েছে| এটা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হত যখন, তখন আমাদের আনন্দমেলা নেওয়া হত না| আমার এক বন্ধু নিয়মিত আনন্দমেলা নিত, তার কাছ থেকে মাঝে মধ্যে ধার করে পরে দেখতাম| টিনটিনের সব থেকে ভালো লাগতো নিখুঁত পরিচ্ছন্ন ছবি| অনেক পরে যখন পুরোটা একসাথে পরি, তখন ভালো লাগা মুগ্ধতায় পরিণত হয়|

স্বপ্নদ্বীপ - সত্যজিত রায়

ছেলেবেলায় প্রাইজ পাওয়া প্রফেসর শঙ্কুতে স্বপ্নদ্বীপের হদিস পাই, গল্পের নাম সন্ধিবিচ্ছেদ করে যা আশা করেছিলাম কাহিনী তার থেকে অনেক দুরে নিয়ে চলে গেলো| আমার ক্ষেত্রে এই গল্পের সব থেকে বড় প্রাপ্তি দ্বীপের বিবরণ - সাদাকালোতে সত্যজিত রায়ের বর্ণনা খাতার পাতায় বারো রং দিয়েও অসম্পূর্ণ মনে হত|

মানুষের মতো মানুষ - লেখকের নাম মনে নেই

হায়ার সেকেন্ডারি পড়ার সময়ে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে এনে পরি - বৃত্যান্ত মনে নেই, শুধু মনে আছে যে এই বইটি ছিল এক রুশ বৈমানিক সম্পর্কে, যিনি বিমান দুর্ঘটনার পরে আহত শরীরে কেবল মাত্র মনের জোর সম্বল করে এক দীর্ঘ্য পথ পাড়ি দিয়ে মৃত্যুকে পরাভূত করেছিলেন| শারীরিক সক্ষমতার থেকেও মানসিক সামর্থ্য অসাধ্য সাধন করতে পারে সেই বিশ্বাস এই বইটা পরেই অর্জন করেছিলাম|

পু: এটা কিন্তু কোনো নম্বর-কৃত তালিকা নয়| বেছে-বেছে কেবল দশটি বইয়ের তালিকা বানানো খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার - তাই নয় কি?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্য পুরস্কার

একটু নয়, প্রচুর দেরি করেই – ইয়ে কি বলে আবার একটু ঢাক পেটাপিটি করি| তবে সেদিক থেকে ধরতে গেলে ভবিষ্যতে আমার ডিজে হওয়ার রাস্তাও খুলছে হয়তো পরোক্ষ ভাবে| আসল সাফাই হলো ‘আমার মতো’ যারা কাজ করেন, তারা হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে এপ্রিল মে থেকে কাজের স্বাভাবিক চাপ শুরু হয় আর তা বাদে যেহেতু ব্যক্তিগত ভাবে আমার পুরস্কার-টুরস্কার পাওয়ার সেরকম অভ্যাস নেই, সেই দিক থেকে - তবে ঘটনা, একবছরে পরপর দুবার পুরস্কার প্রাপ্তি আর তার সাথে ইদানীন গপ্পো লেখারও ঝোঁক বেড়েছে খানিক, কাজেই সবে মিলে ... যাকগে! জ্ঞানীগুনী যারাই আছেন তাদের কাছে ব্যাখ্যা করার দরকার না হলেও, সাধারণ মানুষ হয়তো কৌতুহলী হবেন যে এই উত্তরাধিকার ওয়েব সাহিত্যের ব্যাপারটা কি! দেখুন, মানুষ একটি অদ্ভুত জন্তু – সেভাবে বলতে গেলে এদের রাম-টু-রম রেশিও অন্যান্য জন্তুর তুলনায় অনেক বেশি মানে একোয়ারড মেমরির থেকে প্রিন্টেড মেমরি অনেক কম| জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা খুবই কম, তাও আমার সেকেন্ডারি ব্রেন, মানে ইন্টারনেট থেকে যা জানা, মানব মস্তিষ্কের ডানদিক আমাদের সাথে বেজায় মজার মজার খেলা খেলে! কল্পনা, সৃজনশীলতা – এগুলি অন্য জন্তুদের ভিতর সেভাবে প্রকট কি? হয়ত

নতুন এডভেঞ্চার

“সারাজীবন কলম পিষে কাটাতে চাও নাকি – হ্যাহ? ভালো!” সমুকে তার ব্যাগ থেকে তার বইয়ের পাঁজা বের করতে দেখে পল্টন বললো| “কেন? তুমি কি করতে চাও?” আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো সমু| “আমার ভাই ওসব পোষাবে না – আমি চাই এডভেঞ্চার! সারাজীবন অফিস-কাছারিতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে থেকে চাকরি বাকরি করা – এহে, সে আমার ধাতে নেই| যারা জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে পারে না, তাদের হয়তো … যাক গে!” হাত উল্টোল পল্টন| এরকম খাপছাড়া ছেলের সাথে একসাথে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে একটা বাড়িতে একসাথে থাকতে হবে, সেটা ভাবলেই সমু রীতিমতো তিতিবিরক্ত হচ্ছে| কিন্তু এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও দেখা যাচ্ছে না – সমু’র মাসি-মেসো তার মাসতুতো দিদির বাড়ি নিমন্ত্রনে গিয়েছে, মাসতুতো দাদা সৌগতকে ব্যবসার কাজে অন্য শহরে না গেলেই নয় – বাড়ি ফাঁকা| সমু কলেজ শেষ করে আপাতত বেকার, চাকরি-বাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, সৌগত তাকে বলেছিলো যে অন্তত মাসি-মেসো ফেরা অব্দি সে যদি তাদের বাড়ি থাকতে পারে| গ্রাজুয়েশনের পর থেকে এযাবত কেবল বাড়ি-কোচিং সেন্টার, কোচিং সেন্টার-বাড়ি করে সমুও হাঁফিয়ে উঠেছিলো, কাজেই এমন একটা আউটিংএর সুযোগ পেয়ে সেও লাফিয়ে উঠলো| সেই মতো সমু এক সপ্তাহের মতো জামাক

কিছু কিছু দেখা

আমি বেশি কিছু দেখিনি, কিন্তু কিছু কিছু দেখেছি - খুব ভালো লাগে| সে অনেক দিন আগের কথা ... উহু রুপকথা নয়, আমি তখন তিন চার বছর - কোলাঘাটে থাকি| আমার বাবা বাইকের ডায়নামো ডিসএসেম্বেল করছিলো - ওয়ারিং মনে রাখতে একটা কাগজে এঁকেও রাখছিলো সাথে সাথে| আমিও বাবার দেখা দেখি আরেকটা কাগজে সেই রকম আঁকিবুঁকি করতে শুরু করলাম| বাবা আমার বাহাদুরি দেখে পরের মাসেই আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দিলো| সেই স্কুলে কিরকম কি দেখেছি, বেশিরভাগই ভুলে গেছি| তবে আমায় প্রথমেই একটা ইঁদুর আঁকতে দিয়েছিলো সেটা মনে আছে - আর সেটা 'কেন করবো' মনে করে নকল করতে করতে দেখছিলাম পাশে আর একটা বড় ছেলে 'ঘরের মধ্যে পড়তে বসেছে, এরকম একটা ছেলের লাল জামার নিচে সাদা প্যান্টে' আচ্ছা করে সাদা প্যাস্টেলই ঘসছে| আমি বোকার মতো জিজ্ঞাস করলাম 'কাগজেই তো সাদা আছে!' সে আমার বোকামি শুধরে দিলো - 'উহু আরও সাদা করতে হবে|' কিন্তু সেই ছবিতে কমলা ছাদ, খয়েরি বাক্স আর বাইরের কচি-কলাপাতা-সবুজ মাঠের ওপারে গাড় সবুজ ঝোপঝাড় দেখে খুব সুন্দর লেগেছিলো - মনে আছে| তারপর কি হলো জানিনা - মনে নেই আমার - পাঁচ বছর বয়সে বসিরহাট এলাম| ভাড়াব